দাস্পত্য কলহের জেরে প্রান গেল প্রবাসী গৃহবধূ বিউটি আক্তারের
সরোয়ার হোসেন : একটা স্বপ্নময় সুখের সংসার গড়তে ঘর বেধছিল। দীর্ঘদিন সংসার করার পর দুটি সন্তান জন্ম নিলেও সুখ মেলেনি তার ভাগ্যে। দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত। এক পর্যায়ে প্রথম সংসার ত্যাগ করে সন্তানদের নিয়ে চলে আসে পিত্রালয়ে। সংসারে সুখের আশায় দ্বিতীয় স্বামীর সাথে একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঘর বাধে প্রবাসী নারী বিউটি আক্তার। সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পাড়ি জমান প্রবাসে। কিন্তু দ্বিতীয় স্বামীর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার প্রবাসের আয়ের অর্থের প্রতি। কিন্ত স্বামী তার প্রবাস থেকে পাঠানো টাকা আত্মসাৎ করে। প্রবাস থেকে শত কষ্টে অর্জিত পুরো টাকা অর্থআত্মসাৎ করায় সে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে স্বামীর উপর অভিমান করে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের মোটরা গ্রামে।
নিহত বিউটি আক্তার মোটরা গ্রামের মোসলেম মাতুব্বরের মেয়ে। সকালে বাড়ির পাশের সানরাইজ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের একটি কক্ষের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে থানায় নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে ছেলে জাহিদ শেখ জানান, মায়ের বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা না পেয়ে তার উপর অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এ সময় মায়ের লাশের উপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এসময় গোটা এলাকায় একটি শোঁকের ছায়া নেমে আসে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, বিউটি আক্তারের প্রথমে সূর্যনগর এলাকার শাহজাহান নামের এক ছেলের সাথে বিয়ে হয়। প্রায় ছয় বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হলে দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে পিত্রালয়ে থাকতেন। তিন সন্তানই তার কাছেই থাকত। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সংসারের সবচ্ছলতার কথা ভেবে বিউটি সৌদি আরবে পাড়ি জমান । দুই বছর সৌদি আরব কাঁটিয়ে ছুটিতে এসে পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার লুৎফর নামের এক যুবকে বিয়ে করে। বিবাহের কিছু দিন পরে বিউটি পুনরায় বিদেশ চলে যায়। বিদেশ গিয়ে তার অর্জিত টাকা দ্বিতীয় স্বামী লুৎফরের কাছে পাঠান। দেশে ফিরে এসে স্বামীর নিকট টাকার হিসেব দাবী করে। কিন্ত স্বামী লুৎফর টাকা দিতে অস্বীকার করে। এক পর্যায়ে বিউটির ভাগ্যে নেমে আসে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন। একটি সময় রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে প্রবাসী নারী বিউটি।
প্রবাসী গৃহবধুর ছেলে জাহিদের ভাষ্য মতে, আমার মা (তার স্বামী লুৎফরের নিকট) টাকা চাইলেই প্রায় সময় মারধর করত। এ নিয়ে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়ে আসছিল। কিছু দিন আগেও মারধর করায় আমি ফরিদপুরে হাসপাতালে মাকে চিকিৎসা করে সুস্থতার পরে বাড়িতে এনেছি। তার মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমার মা লুৎফরের সীমাহীন অত্যাচার সইতে না পেরে আমার নানা বাড়ি চলে এসেছে। আমার মায়ের স্বামী লুৎফরের কারনে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ করে তার বিচার দাবি করেন প্রবাসী গৃহবধুর ছেলে জাহিদ।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ জিয়ারুল ইসলাম বলেন, গলায় রশি ঝুলিয়ে একজন মহিলার আত্মহত্যার খবর শুনে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।